রাশিয়াকে সমর্থন দিলো বাংলাদেশ, লাখো শ্রমিক হুমকির মুখে!


1384226_280990335359407_1887441897_n

‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০’-এর স্বাগতিক দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিবর্তে রাশিয়াকে সমর্থন দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। রাজনৈতিক বিবেচনায় এ সিদ্ধান্তের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে ফের জনশক্তি রপ্তানির বাজার খোলার সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।

দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থগুলোকে প্রাধান্য না দেওয়ায় বাংলাদেশ বিপাকে পড়তে যাচ্ছে বলে কূটনীতিকদের আশঙ্কা।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্কের কূটনৈতিক সূত্রগুলো গত শুক্রবার জানিয়েছে, প্যারিসে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ব্যুরোর ১৫৪তম সাধারণ অধিবেশনে ভোটাভুটির মাধ্যমে এক্সপো ২০২০-এর স্বাগতিক দেশের ভাগ্য নির্ধারণের কথা রয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে দুই দিনের সাধারণ অধিবেশন শুরুর কথা রয়েছে।

ব্রাজিলের সাও পাওলো, রাশিয়ার একাতেরিনবার্গ, থাইল্যান্ডের আয়ুথায়া, তুরস্কের ইজমির ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ২০১১ সালের নভেম্বরে এক্সপো ২০২০-এর প্রার্থিতা ঘোষণা করে। এর মধ্যে প্রার্থিতার শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় জুনে থাইল্যান্ডের প্রস্তাব বাতিল করা হয়।

ঢাকার কূটনীতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সামগ্রিক প্রেক্ষাপট ও দীর্ঘমেয়াদে দেশের স্বার্থ বিবেচনা না করে হুটহাট সিদ্ধান্ত যে সমস্যা তৈরি করে, তার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০’-এর স্বাগতিক পক্ষ হিসেবে রাশিয়াকে সমর্থন। কারণ জনশক্তি রপ্তানি তো বটেই, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নিরিখে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটা বেশ নিবিড়। অথচ সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনায় রাশিয়াকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুত শুরু ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাংলাদেশ সফর নিশ্চিত করার বিষয়গুলো কাজ করেছে।

জানা গেছে, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বিষয়টির সংবেদনশীলতা সম্পর্কে যথাযথভাবে জানানো হয়নি। অর্থাৎ স্বাগতিক দেশ হিসেবে চার দেশের মধ্যে কার কী অবস্থান, বাংলাদেশের সঙ্গে কোন দেশের সম্পর্কের গুরুত্ব কেমন—এ বিষয়টি ঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি। অথচ চার প্রার্থী শহরের মধ্যে তুরস্কের ইজমির ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের মধ্যে মূল লড়াইটা হবে। দুই প্রার্থীর লড়াইতে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে দুবাই। এমনকি তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাস সম্প্রতি ঢাকায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে ওই প্রতিবেদনে দুবাইকে বাংলাদেশের সমর্থন করা উচিত বলে মত দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ঢাকায় পাঠানো অন্য এক প্রতিবেদনেও তুরস্কের মতামতকে সমর্থন করেছে।

ঢাকার এক কূটনীতিক এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সামগ্রিক বিচারে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় ভোটাভুটিতে দুবাইয়ের জয়লাভ অনেকটা নিশ্চিত। এটি হলে সে দেশে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হবে। এ বিষয়টিকে বিবেচনায় এনে নেপাল সম্প্রতি দুবাইয়ের প্রার্থিতায় সমর্থন দিয়ে আগামী তিন বছরের জন্য সে দেশে তিন লাখ শ্রমিক রপ্তানির প্রতিশ্রুতি আদায় করেছে। এ পথে হাঁটলে বাংলাদেশের জনশক্তি বাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফের উন্মুক্ত হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত হতো।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে জাতিসংঘে কাজ করেছেন এমন এক সাবেক কূটনীতিক বলেন, রাশিয়াকে অসন্তুষ্ট না করেই কাজটি করা সম্ভব। এ ধরনের গোপন ভোটাভুটির ক্ষেত্রে প্রথমে সমর্থন দেওয়া দেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায় না সমর্থনদানকারী দেশ। তবে সিদ্ধান্ত পাল্টে যে দেশকে ভোট দেওয়া হবে, সে দেশকে মৌখিকভাবে এটাই নিশ্চিত করা হবে, ভোটটি তাদেরই দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের দৃষ্টান্ত রয়েছে

সুত্রঃ প্রথম আলো

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান